প্রায় এক বছর মহাকাশে থাকার পর
মঙ্গলবার পৃথিবীতে ফিরেছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) এর নভোচারী স্কট
কেলি। তিনি ২৭ মার্চ, ২০১৫ তে রাশিয়ান রকেটের মাধ্যমে যাত্রা করেছিলেন। সেটি
উড্ডয়ন করেছিল কাজাখস্তানের বাইকনুর কসমোড্রোন থেকে। তিনি ৩৪০ দিন মহাকাশে থেকে
মার্কিনীদের মধ্যে সর্বোচ্চ দিন থাকার ইতিহাস গড়েন।
আমাদের শরীর পৃথিবীর পরিবেশের সাথে অভিযোজিত। এখানে আমরা ওজনহীনতা অনুভব করি না। কিন্তু মহাকাশে ওজনহীনতার বিষয় রয়েছে। তাই দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকলে তা মানব শরীরে কি প্রভাব ফেলতে পারে তা জানতে নাসা কেলিকে পাঠিয়েছিলেন মহাকাশে।
কেলির শরীরের তুলনামূলক পরিবর্তনগুলো পর্যবেক্ষণ করতে তার জমজ ভাই মার্ক কেলিকে পৃথিবীতে এক বছর রাখা হয়।
নাসার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের ফলাফল থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে নভোচারীদের মঙ্গলগ্রহে পাঠানো। সেটিতে পর্যবেক্ষণ চলবে প্রায় আড়াই বছর।
যদি ভবিষ্যতে মানুষ ভিন্নগ্রহ বা উপগ্রহে বাস করতে চায় তবে মহাশূন্যে আমাদের শরীরে কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা জানা জরুরি। যদি মহাশূন্যে থাকা যায় তবে বেশকিছু বায়োলজিক্যাল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। চলুন জানা যাক সেগুলো:
হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস: যদি ব্যায়াম বা শরীরচর্চা না করা হয় তবে হাড়ের ঘনত্ব ১২% হ্রাস পাবে।
পেশী সঙ্কুচিত: পৃথিবীতে আমাদের ওজন আছে। তাই শরীরে অধিক ভারী পেশীর দরকার হয়। ভার বা ওজনহীন স্থানে পেশীর গুরুত্ব নেই। তাই মহাশূন্যে পেশীর অতিরিক্ত টিস্যু বা কলা শোষিত হয়ে পেশী সঙ্কুচিত হয়।
ঘুমের সমস্যা: ঘুমের সমস্যা হতে পারে। কারণ মহাকাশে নভোচারীরা রাতে ৬ ঘন্টা সময় পান।
লম্বা হওয়া: মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি চেপে ধরে না। তাই মেরুদণ্ড লম্বা হয়ে নভোচারীরা ৩% পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
দৃষ্টিত্রুটি: মস্তিষ্কের চাপজনিত পরিবর্তনের কারণে দৃষ্টিশক্তি খারাপ হতে পারে।
তরলের চাপের তারতম্য: মহাকাশে থাকলে পায়ের দিক থেকে প্রায় ২ লিটারের মত তরল পদার্থ মাথার দিকে যেতে পারে।
মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়া: শরীরের তরল পদার্থগুলো অসমভাবে ছড়িয়ে পড়ায় মুখমণ্ডল থলথলে দেখাবে বা ফুলে যাবে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি: মহাকাশে নানা ধরনের তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ রয়েছে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব না থাকায় বিকিরণ সরাসরি শরীরে লেগে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াবে।
উপর্যুক্ত সমস্যাগুলো ছাড়াও মহাকাশে তাপমাত্রার তারতম্য, জ্বালানী উৎপাদন, মহাশূন্যযান ও তার সম্পদের ব্যবস্থাপনাসহ আরো অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। তাই যদি মানুষ ভিন্নগ্রহে গিয়ে থাকতে চায় তবে এসব সমস্যার সমাধান করতেই হবে।
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, সিএনএন, বিবিসি।